কাগজে-কলমে কিংবা সরকারি নথিতে বকপাড়ার উল্লেখ পাবেন না তবে গাঁয়ের লোক বকপাড়া এ নামেই চেনে

সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: কাগজে-কলমে কিংবা সরকারি নথিতে বকপাড়ার উল্লেখ পাবেন না। তবে গাঁয়ের লোক এ নামেই চেনে গ্রামটিকে। কারণ বর্ষায় গ্রামটিতে পাখির মেলা বসে। প্রায় ১০০ বছর ধরে। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় এই বকপাড়া। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী। গাঁয়ে আছে বড় এক তেঁতুলগাছ। মেঠোপথের ধারে। খালের পারে। ওই গাছটাই ছিল পাখির প্রথম পছন্দ। তারপর আশপাশের আরো কিছু গাছেও ধবল বক আর পানকৌড়ি আস্তানা গাড়ে। দূর থেকে দেখে মনে হয় কাশফুল ফুটেছে গাছের মাথায়।
গাঁয়ের প্রবীণ কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, ব্রিটিশ আমলে গ্রামটির নাম ছিল নটি হরিণা। এরপর কাগজে-কলমে লেখা হয় চরগোবিন্দপুর। তবে এই নাম বেশি লোকের জানা নেই। বকপাড়া বললে সবাই দেখিয়ে দিতে পারে।
শুশ্রূষা দেয় হাজি সাহেবের পরিবার মৃত নূর মুহম্মদ হাজির বিশাল বাড়িজুড়ে পাখির আড্ডাখানা। তাঁর ছোট ছেলে জানান, প্রায় ১০০ বছর ধরে তাঁদের এই বাড়িতে বক আর পানকৌড়ির বসত। প্রতিবছর চৈত্র মাসের শেষে ঝাঁক বেঁধে পাখি আসে। তেঁতুল, বইন্যা বা কড়িগাছে থাকে। ছয় মাস থেকে শীতের আগে আগে আশ্বিনে উড়াল দেয়। হাজি সাহেবের বড় ছেলে আলী আকবর (ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য) বলেন, ‘৮২ শতক জায়গার ওপর আমাদের এই বাড়ি। একসময় বেশ কয়েকটি ছাতিমগাছও ছিল। শত শত পাখি থাকত ওই গাছগুলোয়। কিন্তু পরিবারের লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৫ বছর আগে গাছগুলো কেটে ফেলতে হয়। তাই বলে পাখি কিন্তু চলে যায়নি। ওরা এখন ওই তেঁতুল, বইন্যা গাছগুলোতে থাকছে। বাবা আমাদের বলে গেছেন, যা-ই করো তেঁতুলগাছটি কাটবা না।’
হাজি সাহেবের ছোট ছেলের স্ত্রী বিউটি বেগম বলেন, ‘ঝড়ের দিন কিংবা দমকা বাতাস বইতে থাকলে গাছগুলো থেকে টুপটাপ করে অনেক বক মাটিতে পড়ে আহত হয়। তখন আমরা পাখিগুলোকে শুশ্রূষা দিই। ভরা জ্যোত্স্না রাতে গাছের দিকে তাকালে মনে হয় থোকা থোকা সাদা গোলাপ ফুটে আছে। দেখলে বুক ভরে যায়। পাখি শিকারের কথা আমাদের মনেও আসে না। অনেক সময় এসব পাখি হেঁটে হেঁটে আমাদের কাছাকাছি চলে আসে, মনে হয় যেন ওরা আমাদের কত চেনা।
গ্রামবাসীও আপন ভাবে
শুকুর আলী বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই পাখি দেখতে আমাদের গ্রামে আসে। কেউ কেউ পাখি ধরে নিয়ে যেতে চায়; কিন্তু গ্রামবাসীরা খুব সজাগ। কোনো পাখি শিকারি আমাদের গ্রামে ঢুকতে পারে না।
গ্রামের কিশোরী উম্মে সালমা জানান, সারা দিন গাছগুলোতে পাখির ছানারাই থাকে। আর মা পাখিরা মাঝেমধ্যে মাছ শিকার করে ঠোঁটে করে ছানাদের খাওয়াতে আসে। মূলত সন্ধ্যার সময় পাখির আনাগোনা বেড়ে যায়। তখন পাখির কিচিরমিচির শব্দে আরো বেশি মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সাদা বকের উপস্থিতিতে গাছের পাতা প্রায় দেখাই যায় না।
একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী ফজলু জানান, আগে ইছামতী নদীতে অনেক মাছ ছিল। এখন মাছ কমে আসছে। তার পরও নদীর এখানে-সেখানে শত শত বক আর পানকৌড়িকে মাছ ধরতে দেখবেন। পাখিগুলোকে বিরক্ত না করায় দীর্ঘদিন ধরে ওরা এখানেই থাকছে।
Attachments area
